শান্তির কষ্টিপাথর ইসলাম
লিখেছেন লিখেছেন Md Arif ১২ এপ্রিল, ২০১৪, ১১:৩১:২৮ রাত
১. বিশ্বব্যাপী অশান্তি ও অশান্তির
ধরণ
বিশ্বব্যাপী অশান্তি সৃষ্টি করেছে মানুষ।
অশান্তি মানুষেরই সৃষ্টি।
অশান্তি মানুষেরই কর্মফল। বর্তমান
বিশ্বে বিরাজিত অশান্তির ধরণ ও রূপ
বর্ণনা করে শেষ করা কঠিন।
কয়েকটি বড় বড় অশান্তি নিম্নরূপ :
০১. মানুষের মানসিক অশান্তি,
মানসিক যন্ত্রণা ও দাহ।
০২. ক্ষুধা, দারিদ্র, অভাব।
০৩. মারাত্মক রোগ ও মরণ ব্যাধির
বিস্তার।
০৪. দাম্পত্য কলহ, বিরোধ,
বিচ্ছেদ, বৈধব্য।
০৫. পারিবারিক বিশৃংখলা ও চরম
অশান্তি।
০৬. চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই,
লুটতরাজ, জবরদখল।
০৭. ঘুষ, চাঁদাবাজি।
০৮. ধোকা, প্রতারণা, জালিয়াতি,
ফাঁকিবাজি।
০৯. হিংসা বিদ্বেষ, ঝগড়া বিবাদ,
হানাহানি, খুনাখুনি।
১০. যৌতুকের যাঁতাকল।
১১. নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, ব্যভিচার,
যৌন হয়রানি এবং নারীর অধিকার হরণ।
১২. বেকারত্ব।
১৩. অবাধ্যতা, উশৃংখলা।
১৪. যুলুম, নির্যাতন, অন্যায়,
অবিচার।
১৫. মিথ্যাবাদিতা, ওয়াদা খেলাফি,
চুক্তিভঙ্গ।
১৬. দমন, নিপীড়ন, বিদ্রোহ।
১৭. আগ্রাসন, অবরোধ।
১৮. সন্ত্রাস।
১৯. যুদ্ধ।
২০. নিষ্ঠুরতা ও অমানবিকতা।
২১. মানবাধিকার পদদলন।
২২. বিপথগামিতা।
২৩. মাদকাসক্তি/নেশা।
২৪. সম্মান ও সম্ভ্রমের
নিরাপত্তাহীনতা।
২৫. জীবনের নিরাপত্তাহীনতা।
২৬. হত্যা, আত্মহত্যা, অন্তর্ঘাত,
নারীর জীবনাহুতি।
২৭. সম্পদের নিরাপত্তাহীনতা।
২৮. খেয়ানত, অবিশ্বস্ততা,
আত্মস্যাৎ।
২৯. মন্দা, উৎপাদন ঘাটতি,
সম্পদের স্বল্পতা, টাকার প্রবাহ,
দুস্প্রাপ্যতা।
৩০. পরিবেশ দূষণ।
৩১. অপচয় অপব্যবহার।
শুধু এগুলোই নয়, এর বাইরেও
রয়েছে অশান্তির অসংখ্য ইন্ধন। আর
আমাদের জানা অজানা, প্রকাশ্য
অপ্রকাশ্য, ছোট বড় এসব অশান্তির
ইন্ধনে জ্বলে পুড়ে ছাই
হয়ে যাচ্ছে স্রষ্টার সেরা সৃষ্টি মানুষের
মনের শান্তি, ঘরের শান্তি, সামাজিক
শান্তি, রাষ্ট্রীয়
শান্তি এবং বিশ্বশান্তি। সব অশান্তির
জন্যে দায়ী মানুষের কর্ম :
َﺮَﻬَﻇ ُﺩﺎَﺴَﻔْﻟﺍ ﻲِﻓ ِّﺮَﺒْﻟﺍ ِﺮْﺤَﺒْﻟﺍَﻭ ﺎَﻤِﺑ ْﺖَﺒَﺴَﻛ
ﻱِﺪْﻳَﺃ ِﺱﺎَّﻨﻟﺍ ﻢُﻬَﻘﻳِﺬُﻴِﻟ َﺾْﻌَﺑ ﻱِﺬَّﻟﺍ
ﺍﻮُﻠِﻤَﻋ ْﻢُﻬَّﻠَﻌَﻟ .َﻥﻮُﻌِﺟْﺮَﻳ
অর্থ : স্থলভাগ ও
জলভাগে বিপর্যয়ের
সৃষ্টি হয়েছে মানুষের নিজেরই
কৃতকর্মের দরূণ, যেনো তিনি তাদের
কিছু কৃতকর্মের স্বাদ আস্বাদন
করাতে পারেন। এর
ফলে হয়তো তারা ফিরে আসবে। -
সূরা ৩০ আর রূম : আয়াত ৪১।
২. সর্বব্যাপী অশান্তির কারণ
সমাজের সর্বনিু ইউনিট ব্যক্তি, আর
সর্বোচ্চ ইউনিট এই বিশ্ব।
ব্যক্তি থেকে নিয়ে গোটা বিশ্বব্যাপী জ্বলছে অশান্তির
দাবানল। এতে নিরবে এবং সরবে দগ্ধ
হচ্ছে প্রায় সবাই, সর্বত্র। দগ্ধ
হচ্ছে নারী, দগ্ধ হচ্ছে পুরুষ, দগ্ধ
হচ্ছে শিশু। অশান্তির দহন কতো রকম
এবং কতো প্রকার তা আমরা বলে শেষ
করতে পারবোনা। কিন্তু দহন যে গ্রাস
করে চলেছে সবাইকে সে সত্য লুকাবার
সাধ্য কার?
কিন্তু কিসের কারণে এই
সর্বব্যাপী অশান্তি?
কারা জ্বালিয়েছে এ আগুন?
কারা ঢালছে তাতে তেল ফুয়েল কাঠখড়ি
? হ্যাঁ, বিশ্বগ্রাসী অশান্তির অনিবার্য
কারণগুলো হলো :
১. মানুষের স্রষ্টা ও প্রভু মহান
আল্লাহ তায়ালার প্রতি মানুষের
অবিশ্বাস অস্বীকৃতি ও অবজ্ঞা।
২. আল্লাহদ্রোহীতা (আল্লাহর
বিধানের প্রতি বিদ্রোহ)।
৩. আত্মার দাসত্ব (লাগামহীন
কামনা বাসনা ও লালসার অনুগমন)।
৪. সীমালংঘন ( Transgression)।
৫. অহংকার, দাম্ভিকতা ও
আত্মম্ভরিতা।
৬. লোভ ও
স্বার্থপরতা (ব্যক্তিস্বার্থ
কিংবা জাতীয় স্বার্থ)।
৭. নিষ্ঠুরতা, পাষন্ডতা,
পাশবিকতা।
৮. অশ্লীলতা, নির্লজ্জতা।
৯. পাপলিপ্সা, পাপাচার, অনাচার,
কলুষতা।
যাবতীয় দুর্দশার প্রধান প্রধান কারণ
হলো এগুলো। অবিশ্বাসী, অমান্যকারী,
আল্লাহদ্রোহী, আত্মার দাস,
সীমালংঘনকারী, দাম্ভিক, স্বার্থপর,
নিষ্ঠুর, নির্লজ্জ, পাপাচারী নেতৃত্ব
কর্তৃত্ব ও সমাজের কর্ণধারদের
কারণেই পৃথিবীতে নেমে এসেছে আজ
এতো অশান্তি, এতো গ্লানি,
এতো দুঃখ-কষ্ট আর মানবতার
প্রতি লাঞ্ছনা। এ প্রসঙ্গে দেখুন
মহান আল্লাহর বাণী :
ﺎَّﻣَﺄَﻓ َﻦﻳِﺬَّﻟﺍ ﺍﻭُﺮَﻔَﻛ ْﻢُﻬُﺑِّﺬَﻋُﺄَﻓ ﺎًﺑﺍَﺬَﻋ
ﺍًﺪﻳِﺪَﺷ ﻲِﻓ ﺎَﻴْﻧُّﺪﻟﺍ ِﺓَﺮِﺧﺂْﻟﺍَﻭ ﺎَﻣَﻭ ﻢُﻬَﻟ ﻦِّﻣ
َﻦﻳِﺮِﺻﺎَّﻧ .
অর্থ : যারা কুফুরি (অর্থাৎ তাদের
স্রষ্টাকে অবিশ্বাস ও অমান্য) করবে,
তাদের আমি পৃথিবীর ও পরকালের
জীবনে কঠোর শাস্তি প্রদান
করবো এবং তারা কোনো সাহায্যকারী পাবেনা।
-সূরা ৩ আলে ইমরান : আয়াত ৫৬।
ﺍﻮُﻠُﻛ ﻦِﻣ ِﺕﺎَﺒِّﻴَﻃ ﺎَﻣ ْﻢُﻛﺎَﻨْﻗَﺯَﺭ ﺎَﻟَﻭ ﺍْﻮَﻐْﻄَﺗ
ِﻪﻴِﻓ َّﻞِﺤَﻴَﻓ ْﻢُﻜْﻴَﻠَﻋ ﻲِﺒَﻀَﻏ ۖ ﻦَﻣَﻭ ْﻞِﻠْﺤَﻳ
ِﻪْﻴَﻠَﻋ ﻲِﺒَﻀَﻏ .ٰﻯَﻮَﻫ ْﺪَﻘَﻓ
অর্থ : তোমরা আমার প্রদত্ত পবিত্র
জীবিকা থেকে আহার করো।
পৃথিবীতে সীমালংঘণ করোনা।
তা করলে তোমাদের উপর আমার গজব
অবধারিত হয়ে যাবে। আর যাদের উপর
আমার গজব অবধারিত হয় তারা ধ্বংস
হয়ে যায়। -সূরা ২০ তোয়াহা : আয়াত
৮১।
َﺖْﻳَﺃَﺭَﺃ ِﻦَﻣ َﺬَﺨَّﺗﺍ ُﻪَﻬٰـَﻟِﺇ ُﻩﺍَﻮَﻫ َﺖﻧَﺄَﻓَﺃ ُﻥﻮُﻜَﺗ
ِﻪْﻴَﻠَﻋ .ﺎًﻠﻴِﻛَﻭ
অর্থ : ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে তোমার
রায় কি- যে তার
কামনা বাসনাকে নিজের প্রভু
বানিয়ে নিয়েছে-? তুমি কি তার
পক্ষে ওকালতির দায়িত্ব নেবে? -
সূরা ২৫ আল ফুরকান : আয়াত ৪৩।
َّﻥِﺇ َﻦﻳِﺬَّﻟﺍ ﺍﻮُﺑَّﺬَﻛ ﺎَﻨِﺗﺎَﻳﺂِﺑ ﺍﻭُﺮَﺒْﻜَﺘْﺳﺍَﻭ ﺎَﻬْﻨَﻋ
ﺎَﻟ ُﺢَّﺘَﻔُﺗ ْﻢُﻬَﻟ ُﺏﺍَﻮْﺑَﺃ ِﺀﺎَﻤَّﺴﻟﺍ ﺎَﻟَﻭ َﻥﻮُﻠُﺧْﺪَﻳ
َﺔَّﻨَﺠْﻟﺍ .
অর্থ : যারা আমার আয়াতকে অস্বীকার
করে এবং সে সম্পর্কে অহংকার ও
দাম্ভিকতা প্রদর্শন করে, তাদের
জন্যে আকাশের দুয়ার উন্মুক্ত
করা হবেনা এবং তারা জান্নাতেও
প্রবেশ করতে পারবেনা। -সূরা ৭ আল
আ’রাফ : আয়াত ৪০।
َّﻥِﺇ َﻦﻳِﺬَّﻟﺍ َﻥﻮُّﺒِﺤُﻳ ﻥَﺃ َﻊﻴِﺸَﺗ ُﺔَﺸِﺣﺎَﻔْﻟﺍ ﻲِﻓ
َﻦﻳِﺬَّﻟﺍ ﺍﻮُﻨَﻣﺁ ْﻢُﻬَﻟ ٌﺏﺍَﺬَﻋ ٌﻢﻴِﻟَﺃ ﻲِﻓ ﺎَﻴْﻧُّﺪﻟﺍ
.ِﺓَﺮِﺧﺂْﻟﺍَﻭ
অর্থ : যারা বিশ্বাসীদের
মধ্যে অশ্লীলতা ও
নির্লজ্জতা প্রসারে উদ্যোগী হয়,
তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক
শাস্তি পৃথিবীর জীবনে এবং পরকালেও।
-সূরা ২৪ আন নূর : আয়াত ১৯।
ٍﻉﺎَّﻨَّﻣ ِﺮْﻴَﺨْﻠِّﻟ ٍﺪَﺘْﻌُﻣ ٍﻢﻴِﺛَﺃ - ٍّﻞُﺘُﻋ َﺪْﻌَﺑ َﻚِﻟَٰﺫ
.ٍﻢﻴِﻧَﺯ
অর্থ : (তার আনুগত্য করোনা) .......
যে কল্যাণের কাজে বাধাদানকারী,
সীমালংঘনকারী, পাপিষ্ঠ, রূঢ়-নিষ্ঠুর,
কুখ্যাত। -সূরা ৬৮ আল কলম : আয়াত
১২-১৩।
৩. শান্তির উৎস কোথায়?
মানুষ শান্তিদাতা নয়, মানুষ শান্তি ও
মুক্তির অন্বেষী। সুতরাং শান্তির
অন্বেষীদের
শান্তি চাইতে হবে শান্তি ও
মুক্তি দাতার কাছে। যার
কাছে শান্তি আছে এবং শান্তি লাভের
ফর্মূলাও আছে।
কে তিনি- যার
কাছে শান্তি আছে এবং যিনি মুক্তি দিতে পারেন?
এর জবাব একটাই, আর তাহলো :
যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন
এবং শান্তি ও মুক্তির
অন্বেষী বানিয়েছেন। শান্তি কেবল
তাঁরই কাছে আছে এবং কেবল তিনিই
মানুষকে শান্তি ও মুক্তি দিতে পারেন।
তাঁরই নাম আল্লাহ। শান্তির
চাবিকাঠি তাঁরই মুষ্টিবদ্ধে। তিনিই
শান্তির উৎস এবং তিনিই মুক্তিদাতা :
َﻮُﻫ ُﻪَّﻠﻟﺍ ﻱِﺬَّﻟﺍ ﺎَﻟ َﻪٰـَﻟِﺇ ﺎَّﻟِﺇ َﻮُﻫ ُﻚِﻠَﻤْﻟﺍ
ُﺱﻭُّﺪُﻘْﻟﺍ ُﻡﺎَﻠَّﺴﻟﺍ ُﻦِﻣْﺆُﻤْﻟﺍ ُﻦِﻤْﻴَﻬُﻤْﻟﺍ
ُﺰﻳِﺰَﻌْﻟﺍ ُﺭﺎَّﺒَﺠْﻟﺍ .ُﺮِّﺒَﻜَﺘُﻤْﻟﺍ
অর্থ : তিনিই আল্লাহ।
তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ্
(ত্রাণকর্তা ও মুক্তিদাতা) নেই। তিনিই
একমাত্র সম্রাট, পুত পবিত্র। তিনিই
শান্তি। তিনিই প্রশান্তি ও
নিরাপত্তাদাতা। তিনিই রক্ষক। তিনিই
প্রবল পরাক্রমশীল মহিমান্বিত। -
সূরা ৫৯ হাশর : আয়াত ২৩।
সুতরাং মানুষকে শান্তি চাইতে হবে শান্তির
উৎস মহান আল্লাহর কাছে। আর
শান্তি লাভের জন্য
তিনি যে ফর্মূলা বা জীবন
পদ্ধতি দিয়েছেন সেটার অনুসরণ ও
অনুবর্তন করতে হবে। তবেই মানব
জীবনে নেমে আসবে শান্তির
ফল্গুধারা।
বিষয়: বিবিধ
৭৫৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন